অনলাইন প্রতারনা প্রজুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ক্রমশ বাড়ছে। নিজেকে সময়ের সাথে সাথে আপডেট করতে না পারলে আজকের দিনে চলা মুশকিল। কোথাও থেকে কিছু কিনছেন অথচ পকেটে যথেষ্ট ক্যাশ নেই, মোবাইলের অ্যাপ থেকে মুহূর্তেই পেমেন্ট করে দেওয়া যায়। পরিচিত কাউকে টাকা পাঠাতে হবে, ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিয়ে তার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে অনেকটা সময় লাগে কিন্তু ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং বা বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই মুহূর্তের মধ্যেই তা ঘরে বসে হয়ে যায়।
আজ ঘরে বসেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন পন্ন সামগ্রী, খাওয়ার বা অন্নান্য জিনিস সহজেই ক্রয় করা যায়, তার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইন পেমেন্ট করতে হয়। শুধু সাধারন জিনিস নয় এমন অনেক জিনিস আছে সব বয়সের ছেলে মেয়েরা দোকানে গিয়ে কিনতে ইতস্তত বোধ করেন কিন্তু অনলাইন থেকে তা খুব সহজেই কিনতে পারা যায়। এবং প্রয়জনে চেঞ্জ বা এক্সচেঞ্জ ও করা যায় সহজেই।
খাওয়ার দাওয়ার বা সাধারন জিনিসপত্র নয়, শিক্ষা বা ডিগ্রীও আজ অনলাইনের মাধ্যমে করা যায়। বিখ্যাত টিচারের টিউশন ক্লাস নেওয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন কাজ আজ নিজের ঘরে বসেই করা সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে দেশ – বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বিজনেস করা সম্ভব হয়েছে।
বিশেষত ঘরের মহিলারা যাদের পক্ষে বাইরে বেরিয়ে কাজ করার সময় হয় না তারাও প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিভিন্ন ভাবে আয় করছেন।
সাধারন ভাবে আমরা ঘরে বসেই বিশ্বের অনেক কিছুই প্রয়জনীয় তথ্য জানতে পারছি, বিজনেস করতে বা আয় করতে পারছি বা ক্রয় করতে পারছি আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই টাকা পয়সার লেনদেন অনলাইনের মাধ্যমে করছি।
Table of Contents
অনলাইন প্রতারনা কি ও কিভাবে হয় ?
অনলাইনের মধ্যে (যেমন – মেসেজ, মেইল, ফোনকল বা অন্য উপায়ে) প্রল্ভন বা ফাঁদে ফেলে আর্থিক ক্ষতি বা আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়াকে অনলাইন প্রতারনা হিসাবে ধরা হয়। যদিও এর অনেক নতুন নতুন ধরন হয়। কিভাবে অনলাইন প্রতারনা হয় তার কয়েকটা উদাহরণ –
অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন কল –
নিজেকে ব্যাঙ্কের একজন কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়ে ডেবিট কার্ড বাতিল করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এবং অনলাইনে KYC আপডেট করলে এক্ষুনি তা চালু হয়ে যাবে বলে আপনাকে OTP শেয়ার করতে বলে, আর আপনি OTP শেয়ার করলেই আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব।
লটারির লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা –
কোনো জানা বা অজানা কম্পানীর নামে মেসেজ বা ইমেইল আসে আপনি একটা বড়ো অ্যামাউন্টের টাকা বা টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ইত্যাদি জিতেছেন আর এজন্য আপনাকে শুধু ডেলিভারি চার্জ দিতে হবে ( সেটি – ২০০০ বা ৩০০০ টাকার মতো হতে পারে)। আর আপনি টাকা পাঠানোর পর আর কিছুই পাবেন না।
অ্যাপের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলা –
অপরিচিত নম্বর থেকে কল বা মেসেজ আসে আপনার সিম কার্ড ব্লক হয়ে যাবে কিছুক্ষনের মধ্যে বা আপনার ডেবিট কার্ড বা কোনো অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যাবে। আপনি এক্ষুনি আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করে এর মাধ্যমে প্রসেসিং ফি ১০ বা ২০ টাকা পাঠান তাহলে ব্লক খুলে দেবো আর আপনি এটা করলে আপনার সমস্থ তথ্য প্রতারক বা হ্যাকার দের কাছে চলে যাবে ওরা সহজেই আপনার অ্যাকাউন্ট খালি করে দেবে। KYC qs App এই ধরনের একটি অ্যাপ।
SMS ব্লকিং ফাঁদে ফেলা –
মোবাইলে একই দিনে বা পরপর কয়েকদিন ধরে একই মেসেজ আসে। এক্ষেত্রে হ্যাকাররা আপনার নম্বর হ্যাক করে সার্ভিস প্রভাইডারকে E-Sim এর রিকোয়েস্ট পাঠায় আর সার্ভিস প্রোভাইডার বারবার হ্যা বা না এর জন্য SMS করে আর আপনি যদি ভুল করে একবার হ্যা করে দেন তাহলে E-Sim হ্যাকারদের হাতে চলে যায় আর তারপর বিভিন্ন ভাবে টাকা খালি করে দেয় অ্যাকাউন্ট থেকে।
ব্যাঙ্ক থেকে লেনদেন করে দেবে ফাঁদে ফেলা –
প্রতারক গলায় নকল আইকার্ড ঝুলিয়ে আপনার কাছে আসে, যদিও আগে ফোন কলে আপনার প্রয়জন জেনে আপনার সময় নিয়ে আসে। বিভিন্ন কাগজে সাইন করিয়ে প্রসেসিং ফি এর নাম করে মোটা টাকা নিয়ে বা বিশ্বাস অর্জন করার জন্য চেক বা অনলাইন পাঠাতেও বলেন। যেকোনো প্রকারে আপনার থেকে টাকা পেয়ে গেলে তাদের আর খোঁজ পাবেন না।
আধার কার্ডের নামে ফাঁদে ফেলা –
বিভিন্ন গ্রামীন অঞ্চলে আধার কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় আর বিভিন্ন অ্যাপ বা ফোন কলের মাধ্যমে বা আধার কার্ড ঠিক করে দেওয়ার নাম করেও প্রতারনা করে যাবে।
এছাড়াও বিভিন্ন নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রতারকরা ক্রমশ সাধারন মানুষের সাথে প্রতারনা করে চলেছে।
অনলাইন প্রতারনা থেকে সাবধান হবেন কিভাবে ?
আমরা কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে প্রতারনার হাত থেকে সাবধান হতে পারি। যেমন অপরিচিত নম্বর থেকে আসা ফোন কলের বিষয় নিয়ে যথোপযুক্ত বিষয়ের ওপর খোঁজখবর নেওয়ার পরই আর্থিক লেনদেন করা ভালো।
ফ্রিতে কোণো প্রলোভনের ফাঁদে না পরে, লটারি সংক্রান্ত বিষয় এড়িয়ে চলা বা তার যথোপযুক্ত খবর নেওয়ার পর বা পরিচিত লোকের সাথে আলোচনা করার পর আর্থিক লেনদেন করা উচিৎ।
কোনো অ্যাপ সম্বন্ধে না জেনে বা ডাউনলোড বা তার মাধ্যমে কোনো লেনদেন করা অনুচিত। এবং পিন ছাড়াও ফিঙ্গার পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করুন। SMS ব্লকিং হলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সার্ভিসপ্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করে নেওয়া ভালো।
ব্যাঙ্ক লোণের জন্য অপরিচিত কোনো ব্যাক্তির সাথে কথা বা লেনদেন না করে বা নিদিষ্ট ব্যাঙ্কের বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে লেনদেন করলে ভালো।
প্রয়জনীয় কোনো নথি বা তথ্য কোনো অপরিচিত ব্যাক্তির কাছে শেয়ার না করলে প্রতারকদের ফাঁদ থেকে বাঁচা যায়, সময়ে সময়ে অ্যাকাউন্ট চেক করুন ও সম্ভব হলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পাসওয়ার্ড বদলান।
একটা কথা মনে রাখবেন কোনো ব্যাঙ্ক বা প্রতিষ্ঠান তাদের দেওয়া কার্ড এর OTP বা পাসওয়ার্ড জানতে চাইতে পারেনা।
প্রতারিত হলে কি করা উচিৎ ?
যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্দিষ্ট দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান বা নিকটবর্তী থানায় অভিযোগ জানান। কাজ না হলে নির্দিষ্ট দপ্তরের উপর মহলে মেইল বা লিখিত যোগাযোগ করুন। প্রতারকদের জন্য নিদিষ্ট ধারায় সাজার ব্যাবস্থা আছে।
আশা করি অনলাইন প্রতারনা নিয়ে এই নিবন্ধ প্রতারিত হওয়ার হাত থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন
বেলে মারিয়ানো প্রথম ফিলিপিনা, ২০২২ এশিয়ান স্টার পুরস্কার জয়ী